এফডিসি এখন পিকনিক স্পট!

Table of Content

মিডিয়া পাড়া: দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে কেপিআইভুক্ত করা হয়। যেখানে থাকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা। কাজের সুবাদে প্রবেশের এখতিয়ার শুধু এর মানুষদের। ঠিক এমনই একটি এলাকা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএফডিসি)। যা চলচ্চিত্রের শুটিং ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেখানে শিল্পী, নির্মাতা ও কুশলীদের জন্য থাকে নিরাপত্তা বেষ্টনী।
তবে গতকাল শুক্রবারের চিত্রটা ছিল একেবারে ভিন্ন। নিরাপত্তাকে ‘তোয়াক্কা’ না করে সেখানে আয়োজন করা হয় প্রায় ৪ হাজার মানুষের পিকনিক বা মিলনমেলা। যা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮-৯টায়। সারাটা দিন তারা বিএফডিসির অফিসের পাশে যে যার মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাদ যায়নি জহির রায়হান কালার ল্যাব, শুটিং ফ্লোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোও।
তবে মজার বিষয়, দিনভর এত কিছুর পরও এফডিসি প্রশাসন কিছুই জানে না। কীভাবে হলো এই আয়োজন? অবাক প্রশাসনও, বিস্ময়ে প্রশ্ন করল, ‘আরে এরা কারা, কোথা থেকে এলো!’

জানা যায়, এটির আয়োজন করে এসএসসি ৯৩ সালের ব্যাচ (স্বপ্নের ৯৩)। দিনভর অনুষ্ঠানে ছিল খেলাধুলা, আড্ডা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। সরজমিনে দেখা যায়, এফডিসির মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড়েই নানা ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন।
চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত অতিথিরা। যারা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। গাছ ও ঘাস মাড়িয়ে বসে আছেন কোনও কোনও দল। বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ফোনে পাওয়া যায়নি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনকে।

কথা হয় কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং ফ্লোর ও সেট ইনচার্জ হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে। ঘটনা শুনে অবাক তিনিও। তার ভাষ্য, ‘গতকাল আমার ডে অফ ছিল। আজও তাই। এ কারণে গতকাল কী ঘটেছে তা আমি জানি না। এটা ঠিক এখন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পিকনিকের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এত মানুষ সেখানে গিয়েছিল নাকি?’
কেপিআই এলাকায় পিকনিক সম্ভব কিনা এবং তিনি ফ্লোর ইনচার্জ হলেও বিষয়টি তার গোচরে নেই কেন? জানতে চাইলে সদ্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ফ্লোর ইনচার্জ- এটা ঠিক আছে। তবে ভাড়ার বিষয়টি দেখেন অন্য এক কর্মকর্তা।’
প্রশ্নের উত্তর এই কর্মকর্তা না দিলেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয় প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু’র সঙ্গে। তিনিও বিস্মিত হন ঘটনা শুনে। তার ভাষায়, ‘কেপিআই হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে পিকনিক বা মিলনমেলা হয় কীভাবে? এখানে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট ও নথি আছে। এখানে তো জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।’
অন্যদিকে, বিষয়টি এফডিসির নিয়মে হয়েছে কিনা তা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহিন সুমন।

এদিকে, সরজমিনে দেখা যায়, ‘বন্ধুদের মিলনমেলা’ শিরোনামে এ আয়োজন করে ‘স্বপ্নের ৯৩’ নামের সংগঠন। আয়োজন শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। বিকালে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। যেখানে অংশ নেয় শোবিজের বেশ ক’জন শিল্পী। সে আয়োজনে ছিল নাচ, গান ও অভিনয়ের অংশও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আয়োজনের জন্য এফডিসির দুটি ফ্লোর ও মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয়। এছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু খোলা প্রাঙ্গণ। সরকারি স্থানে করা এ আয়োজনটির নেতৃত্ব দেন পরিচালক সমিতির সদস্য বিপ্লব শরীফ।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই তিনি রান্নার আয়োজন ও এফডিসিতে সামিনা টাঙিয়ে খাবার স্থান তৈরি করেন। রাত অবধি সাজানো হয় পুরো এফডিসি। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিরাপদ এ স্থানে চলে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের মহাযজ্ঞ।

বিষয়টি জানতে ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে থাকা এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বিক্রয়) ও ল্যাবরেটরি প্রধান মোঃ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন হবে বলে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তা। বিষয়টি সহযোগিতা করেছেন রফ নামের একজন প্রডাকশন ম্যানেজার। নিয়ম মেনে তাদের বরাদ বাইরে আমি তেমন কিছু জানি না। এখানে তো পিকনিক হওয়ার কথাই না।’

Tags :

Popular News

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.

© 2017-25 All Rights Reserved by Media Para