অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর সময় বাবা-মা কেউই বেঁচে ছিলেন না। পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় অভিনেত্রীর কোনো ভাই-বোনও ছিলেন না।
রাজধানীর উত্তরায় একটি বাসায় থাকতন হিমু। তার সঙ্গে ছিল মেকআপ ম্যান মিহির। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর তার কিছু সম্পত্তি রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পরিবারহীন হিমুর এই সম্পত্তি এখন কারা ভোগ করবে?
এ বিষয়ে হিমুর সহকর্মী অভিনেত্রী স্বর্ণলতা দেবনাথ জানালেন, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে নিজের শেষ ইচ্ছের কথা শুটিং সেটে জানিয়েছিলেন এই তারকা।
সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বর্ণলতা বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে ‘স্বপ্নের রানী’ শুটিং সেটের মেকআপ রুমে হিমু আপু হঠাৎ করেই বলছিল, ‘আচ্ছা আমি যদি মারা যাই বা চলে যাই তাহলে এই যে আমার গাড়ি, ফ্ল্যাটটা এটা কি আমি অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে পারব?’ আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমরা সবাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন এসব কথা বলছো? তখন আপু বলেছিল, মানুষের তো অনেক কিছু হতে পারে। আমার না আর বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমি যদি মরে যাই তাহলে এগুলো অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে চাই।
হিমুর সঙ্গে একাধিক নাটকে কাজ করা এই অভিনেত্রী আরও বলেন, তখন বুঝতে পেরেছিলাম, আপু একা থাকতে থাকতে অনেকটা ডিপ্রেসড হয়ে গেছেন। প্রথম প্রথম যখন তার সঙ্গে কাজ করতাম, তখন আপু বিগো অ্যাপসে অনেক ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু শেষের দিনগুলোতে তিনি অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলেন। চুপচাপ থাকতেন। আমরা যে চঞ্চল হিমু আপুকে দেখেছি, শেষ সময়ে ওই চঞ্চলতা পাইনি তার মাঝে।
এ বিষয়ে শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু হিমুর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, তাই আদালত থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকবে তার সম্পত্তি (ফ্ল্যাট-গাড়ি)। দলিলপত্র চেক করে দেখা হবে কোনো উইল আছে কি না। পরে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে মোতাবেকই সবকিছু হবে।
জানা যায়, ২০২০ সালে হিমুর মা শামীম আরা চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর বাবা প্রকৌশলী সানা উল্লাহ গত আগস্ট মাসে মারা যান।
অভিনেত্রীর মামা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক মঈন উদ্দিন চৌধুরী জানান, ১৯৮১ সালে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা সানা উল্লাহর সঙ্গে হিমুর মায়ের বিয়ে হয়। হিমুর জন্মের পরেই তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকেই হিমুকে নিয়ে তার মা লক্ষ্মীপুরে থাকতেন। কখনো দাদার বাড়িতে যাওয়া হয়নি তার।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রহস্যজনক মৃত্যু হয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর। এ সময় অভিনেত্রীর বাসা উপস্থিত ছিলেন হিমুর বয়ফ্রেন্ড জিয়াউদ্দিন এবং মেকআপ আর্টিস্ট মিহির। জিয়া উদ্দিনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে র্যাবের নজরদারিতে রয়েছেন মিহিরও।
অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুরের মেয়ে হোমায়রা হিমু মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। ২০০৬ সালে টেলিভিশন নাটক ‘ছায়াবীথি’-তে প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর) নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। তারপর ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি।
ছোট পর্দার পাশাপাশি হিমু নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্রেও। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার মাধ্যমে এই ভুবনে তার অভিষেক হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ চলচ্চিত্রে ‘অরু’ চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা কুড়ান তিনি। ‘তোরে কত ভালোবাসি’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেছেন হিমু। সাওতালদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এর গল্প। দেওয়ান নাজমুল পরিচালিত এ চলচ্চিত্র এখন মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।